ল্যাপটপ জিনিসটা আসলেই ছোট্ট খাট্ট একটা জিনিস, তার ভিতরে সবকিছু।  ডেক্সটপ বনাম ল্যাপটপ চিন্তা করুন তো দেখি ?

ল্যাপটপ =
১টা এলসিডি ডিসপ্লে
+ কীবোর্ড
+ টাচ সেনসিটিভ মাউস
+ স্পিকার
+ কেসিং টাওয়ার এবং এর আনুষাঙ্গিক (প্রসেসর+র্র্যাম+ডিভিডি ড্রাইভ+মাদারবোর্ড)
+ কার্ড রিডার
+ ওয়ারলেস কানেক্টিভিটি সল্যুশন
+ সবচেয়ে বড় জিনিস, বেশ পাওয়ারফুল একটা ইউপিএস যেটা কিনা ২/৩/৪ ঘন্টা ব্যাকআপ দেয় অনায়াসে।
+ টানা টানি করা খুব সোজা

যাক মূল কথায় আসি, ল্যাপটপ ছোট্ট খাট্ট জিনিস, আর ছোট্টখাট্ট বলেই কমপ্লেক্সিটি বেশী। আর এর যে অংশটি নিয়ে সবার চিন্তা সবথেকে বেশী, সেটা হচ্ছে এর ব্যাটারী। কোন ব্যাটারী কতক্ষন ব্যাকআপ দেয়, তার উপরেই ল্যাপটপের অনেককিছু।
কমপ্লেইন কিন্তু কম না !!! "আমার ব্যাটারী ১ বছর পরেই আর চার্জ থাকে না, ভাল না, ব্যাকআপ বেশী থাকে না..... হেন তেন এই সেই........ উফফফফ..... জীবন বরবাদ প্রায়।

তো ভাই ও বোনেরা (যদি কেউ থেকে থাকেন  :-# ) আসেন এইটা নিয়াই অল্প সল্প গল্প হয়ে যাক। happy

**বর্তমান সময়ের সব ল্যাপটপ ব্যবহার করে Li-ion (লিথিয়াম-আয়ন) ব্যাটারী। এই ব্যাটারীগুলোতে "মেমোরী এফেক্ট" জাতীয় জিনিসটা নাই। মেমোরী এফেক্ট কাজ করতো পুরোন নিকেল-ক্যাডমিয়াম ব্যাটারীগুলোতে। এটার মানে অনেকটা এরকম যে ব্যাটারী ফুল চার্জ করা হলো, কিন্তু ব্যবহার করা হলো মাত্র ৫০%। পরের বার চার্জ দেয়ার সময় ব্যাটারী ভুলে যায় যে তার ৫০% অলরেডী চার্জড, সে ৫০% চার্জ করে এবং আস্তে আস্তে ধরে নেই, ওই ৫০% ই তার মূল ক্যাপাসিটি। (কি আজিব!!) ওইসব ব্যাটারীতে পুরো পারফর্মেন্স পেতে আপনাকে না চাইলেও ব্যাটারী ফুল ডিসচার্জ করতেই হতো। লিথিয়াম ব্যাটারীতে এই সমস্যা নেই , কাজেই যে কোন সময়ই চার্জে দিতে পারেন।

**লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারী গুলো ৩০০-৫০০ সাইকেল পর্যন্ত তার ফুল ক্যাপাসিটি তে সার্ভ করতে পারে, তারপর তার পারফর্মেন্স আস্তে আস্তে  ড্রপ করে। খুব সম্ভবত ৩০০-৫০০ সাইকেল পরে ক্যাপাসিটি ২০% কমে যায়। তখন ব্যাটারী ক্যালিব্রেশন খানিকটা সহায়তা করে।

**লিথিয়াম ব্যাটারী প্রথম ব্যাবহারের পূর্বে সম্পূর্ণ চার্জ করে নেয়া উচিত। তবে দোকানদার যদি বলে থাকে ব্যাটারী ৮ঘন্টা চার্জ দিবেন ব্যাবহার করার আগে, তাহলে ফুউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউ দিয়ে উড়িয়ে দিবেন। ল্যাপটপের আজকাল কার চ্যাংড়া চার্জার গুলো দারুন ফাঁকিবাজ। যখনই টের পায় চার্জ ফুল হয়ে গেছে সে চার্জ সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। কাজেই ৮ঘন্টা চার্জ দেয়া সম্ভব না।

** চার্জ দিলেন, কিন্তু ব্যাটারী কি ফুল পারফর্মেন্স দিচ্ছে ??? নাহ! প্রথমদিকে ব্যাটারী তার ফুল পারফর্মেন্স নিয়ে চলে না। চালাতে হলে এটাকে ক্যালিব্রেট করতে হয়। আই মিন, ব্যাটারী টিকে প্রথম কয়েকটি সাইকেল ফুল চার্জ ও ফুল ডিসচার্জ করতে হয়। কমপক্ষে প্রথম ৩/৪ টি সাইকেল  ব্যাটারী কে ফুল চার্জ করুন, তারপর ফুল ডিসচার্জ করুন ( ওয়ার্নিং দেখিয়ে বন্ধ না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত)

** মেমোরী এফেক্ট নাই, কাজেই এই ব্যাটারীগুলোকে সবসময়ই পাওয়ার আউটলেটের সাথে কানেক্ট করা রাখা যায়। কিন্তু তাই বলে সবসময় কিন্তু না আবার। কারন ফুল চার্জ হওয়ার পরও যদি চার্জার লাগিয়ে রাখা হয়, তখন অনেক চার্জারই অটোমেটিক ব্যাটারী ডিসচার্জ করা শুরু করে। তাছাড়া এটি খানিকটা ক্ষতিকর। কাজেই যখন ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন না তখন এডাপ্টর আনপ্লাগ করে রাখুন। আর সম্ভব হলে নিশ্চিত করুন যে ব্যাটারী যখন চার্জ করছেন সেটা ১০০% ই চার্জ হয়েছে।

**লিথিয়াম ব্যাটারীর ক্ষেত্রে চার্জ দিতে বলার নির্দিষ্ট কোন বাধাধরা সময় নেই, দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য অর্ধেকের কিছুটা কম অর্ধেক ৪০% এর মত চার্জ বাকি থাকতে চার্জ কানেক্ট করতে পারেন।

**এসি পাওয়ারে থাকাবস্থায় ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্ট করিয়ে রাখবেন, কারন তাতে করে ডাটা খুঁজে পেতে সুবিধা প্রসেসরের, দ্রুত ও বটে। ফলাফল ব্যাটারী মুডে চললেও প্রসেসর দ্রুত ডাটা খুঁজে পাবে, হার্ডডিস্ককে বেশী কষ্ট করতে হবে না, সময় বাচাবে, বাচাবে ব্যাটারী লাইফ ও।

**দরকার না পড়লে ডিসপ্লের ব্রাইটনেস কমিয়ে দিন। নতুন এলইডি ডিসপ্লেগুলোতে অনেক কম ব্রাইটনেস রেখেও স্বাচ্ছন্দে কাজ করা সম্ভব।

**র্র্যাম বাড়িয়ে নিতে পারেন, এটা হার্ডডিস্কের উপরে চাপ কমায়, ফলে ব্যাকআপ বাড়বে।

**প্রয়োজন না হলে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ এমনকি কাজে না লাগলে (যদি মোবাইল দিয়ে নেট ইউজ করে থাকেন)  বায়োস থেকে ইথারনেট কার্ড (ল্যান কার্ড) কেও ডিজ্যাবল করে দিন। উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর কি দরকার ???

** যদি গ্রাফিক্স কার্ড দরকার হয়, তাহলে কেনার সময় চেষ্টা করুন সুইচাবল ফীচার আছে কিনা দেখে কিনতে, সুবিধা হচ্ছে যখন ব্যাটারী মুডে চালাবেন, তখন গ্রাফিক্স কার্ড কে ডিজ্যাবল করে দিয়ে বিল্টইন গ্রাফিক্স চিপস কাজ করবে, বাড়তি গ্রাফিক্স কার্ড বন্ধ থাকায় নিম্নপক্ষে ১১ থেকে ১৯ ওয়াট বেচে যাবে আপনার। তাছাড়া গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজনে প্রচুর পাওয়ার নিয়ে নিতে পারে, যা আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারীর পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই ব্যাটারী মুডে গেম খেলার / গ্রাফিকাল সফটয়্যার নিয়ে কাজ করার চিন্তা ভাবনা থাকলে ভুলে যান, আর খেলতে হলেও লো প্রোফাইল সেটিংস এ বিল্টইন গ্রাফিক্সে চালান। তবে ব্যাটারী দেড় ঘন্টার বেশী ব্যাকআপ দিবে না সেই ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন।

** ব্যাটারী মুডে এক্সটারনাল ডিভাইস না লাগিয়ে রাখা বেটার, কারন তারাও তো মানুষ........থুক্কু.... ইলেকট্রনিক ডিভাইস, তাদেরও চার্জ দরকার। আর সেই চার্জ যদি তারা ল্যাপটপের ব্যাটারী থেকেই নেয়া শুরু করে তাহলে তো সমস্যা!!!

**ফাইল কপি, এক্সটার্নাল ড্রাইভ এ নেয়া-আনা ব্যাটারী মুডে ব্যাকআপ টাইম কে ভালো প্রভাবিত করে, কারন এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক চার্জ নেয় আর এদিকে ইনটার্নাল হার্ডডিস্ককে বেশ স্পিডে রাইট করতে হয়।

**বাসায় যদি ইউপিএস থেকে থাকে, তাহলে এডাপ্টরকে ইউপিএস এর থ্রু তে চার্জ প্রসেস এ নিতে পারেন। সুবিধা হচ্ছে কারেন্ট চলে গেলেও এডাপ্টর জানবে সে বিদ্যুৎ পাচ্ছে, কাজেই ব্যাটারী মুডে যেতে হবে না ল্যাপটপকে। ইউপিএস এ কানেক্ট করিয়ে এই ভার্চুয়াল / এক্সটারনাল ব্যাটারীর সাহায্যে বাড়তি ব্যাকআপ পেতে পারেন কমপক্ষে এক ঘন্টা বার তার উর্ধে।

** ডেক্সটপ রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করতে চাইলে ব্যাটারী ফুল চার্জ হওয়ার পর খুলে রাখা ভাল, তবে যদি ইউপিএস ব্যাকআপ না থাকে, মনের ভুলেও এই চমৎকার কাজটি করতে যাবেন না। আর মাঝে মাঝে ক্যালিব্রেট করিয়ে নেয়া ভাল সেক্ষেত্রে

**এডাপ্টর যদি অটোমেটিক ভাবে ফুল চার্জ হওয়ার পরে চার্জ ডিসকানেক্ট না করতে পারে সেক্ষেত্রে হালকা সমস্যা। লম্বা সময় ধরে এসি পাওয়ারে চালানোর মানে ব্যাটারি ওভারচার্জ হতে থাকবে। যা কিনা কমিয়ে দিবে লাইফ সাইকেল কে।

** ব্যাটারী মোডে স্লিপ টাইম, ডিসপ্লে অফ টাইম, এবং হাইবারনেশন টাইম সবগুলোকেই দ্রুত করিয়ে দিন।

**শো-আপ ব্যাপারটা যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ না হয়, ল্যাপটপে যদি দীর্ঘসময় এসি পাওয়ার ছাড়া কাজ করতে হয়, তাহলে উইন্ডোজ ক্ল্যাসিক থীম ব্যাবহার করুন, ডেক্সটপ ব্যাকগ্রাউন্ড কালার ব্ল্যাক ব্যবহার করুন। ড্র্যামাটিক ব্যাটারী ব্যাকআপ টাইম ইমপ্রুভ করবে।

**যাদের কোর আই ৩ / কোর আই ৫ তারা একটা ছোট্ট ট্রিক করতে পারেন। ব্যাটারী মুডে চালূ করার আগে বায়োস থেকে মাল্টিপ্রসেসর এবং হাইপারথ্রেডিং বন্ধ করে দিন। winking হাইপার থ্রেডিং বন্ধ করে দেয়ার ফলে উইন্ডোজ চারটি প্রসেসরের জায়গায় দুইটি প্রসেসর পাবে, এবং মাল্টিপ্রসেসর ফীচার বন্ধ করার ফলে CPU 0  চালু থাকবে কিন্তু CPU 1 বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ ২টি ফিজ্যিকাল কোর এবং ৪টি থ্রেডের বদলে একটি মাত্র ফিজিক্যাল কোর নিয়ে কাজ করতে থাকবে। কাজেই বিদ্যুৎ বেচে যাবে বেশ খানিক।
পুনশ্চঃ কোর ২ ডুয়ো ব্যবহারকারীরা মাল্টিপ্রসেসর ফীচার আর ডুয়াল কোর ব্যবহার কারীরা হাইপারথ্রেডিং ফীচার বন্ধ করে দেখতে পারেন।